July 2018 - WBBSE Class: 7

Follow Us @interactive_physics

Thursday, July 12, 2018

Foundation Series, Atom And Molecule, Class: VII, Part: 3

July 12, 2018 0 Comments
যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লেখার নিয়ম:

যোজ্যতার ধারণা (Concept of Valancy):
যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লিখতে গেলে প্রথমে যোজ্যতার ধারণা একটু নেওয়া প্রয়োজন। আমরা এর পূর্বে প্রথম \(20\) পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত মৌলের যোজ্যতা কীভাবে নির্ণয় করতে হয় দেখেছি। এখানে যোজ্যতা কথাটির অর্থ হল যোজন ক্ষমতা। অর্থাৎ একটি মৌল অপর একটি মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকেই যোজ্যতা বলে। একটা উদাহরণ দিলেই আমরা বুঝতে পারবো।
যেমন, হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) একটি ইলেকট্রন বর্জন করে \({H^ + }\) ক্যাটায়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে \(C{l^ - }\) ঋনাত্বক আয়নে পরিণত হয়। এখানে হাইড্রোজেন পরমাণুটি যে ইলেকট্রন বর্জন করে, ক্লোরিন পরমাণুটি সেই ইলেকট্রনটিকে গ্রহণ করে যথাক্রমে \({H^ + }\) ও \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়ে তারা তড়িৎ আকর্ষণে পরষ্পর যুক্ত হয়ে \(HCl\) অণু গঠন করে। তাই এখানে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর উভয়েরই যোজ্যতা হল \(1\)।

আবার একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু \(\left( {Ca} \right)\) দুটি ইলেকট্রন বর্জন করে \(C{a^{ + + }}\) আয়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে এবং \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়। তাহলে এখন যদি ক্যালশিয়াম ও ক্লোরিন মিলে যৌগ গঠন করতে চায় তাহলে ক্যালশিয়াম পরমাণু দুটি ইলেকট্রন বর্জন করবে কিন্তু ক্লোরিন কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে, তাই এক্ষেত্রে দুইটি ক্লোরিন পরমাণুর দরকার হয়। এবং ওই যৌগিক পদার্থটির সংকেতে একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু থাকে এবং দুটি ক্লোরিন পরমাণু থাকে, তাই এই যৌগটিকে লিখতে হয় \(CaC{l_2}\)। তাই এখানে ক্যালশিয়াম পরমাণুর যোজ্যতা হল \(2\) এবং ক্লোরিন পরমাণুর যোজ্যতা হয় \(1\)।

আবার কয়েকটি মৌল আছে যাদের যোজ্যতা একাধিক। এদেরকে পরিবর্তনশীল যোজ্যতা যোজ্যতা (Variable Valancy) বিশিষ্ট মৌল বলে। যেমন, ফেরাম বা লোহা, স্ট্যানাম বা টিন, কিউপ্রাম বা কপার, মার্কারী বা পারদ ইত্যাদি। নিম্নে একটি তালিকার মাধ্যমে এদের যোজ্যতাগুলি দেখানো হল। যৌগ গঠনের সময় যখন কম যোজ্যতার মৌলটি ব্যবহৃত হয় তখন তাদের নামের শেষে "আস" এবং যখন বেশী যোজ্যতার মৌলটি যখন লেখা হয তখন নামের শেষে "ইক" কথাটি লেখা হয়।

মূলকের ধারণা (Concept of Radicals):
কখনো কখনো একই মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু বা বিভিন্ন মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু সমষ্টি বা আয়নের মতো আচরণ করে। তখন এদের সাধারণভাবে মূলক (Radicals) বলে। এই মূলকের আধান ধনাত্বক এবং ঋনাত্বক উভয়ই হতে পারে। এবং মূলকগুলির আধানের পরিমাণের দ্বারাই তার যোজ্যতা নির্ধারিত হয়।
যেমন, সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\) ইত্যাদি।

কয়েকটি সংজ্ঞা:

যোজ্যতা (Valancy):
কোনো মৌলের একটি পরমাণু, অপর কোনও এক বা ভিন্ন মৌলের কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজ্যতা (Valancy) বলে।
সাধারণভাবে, কোনও মৌলের একটি পরমাণু যে কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা হাইড্রোজেনঘটিত কোনও যৌগের অণু থেকে যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু প্রতিস্থাপিত করতে পারে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ করা হয়। কারণ এক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের যোজ্যতা হয় ।

মৌলমূলক (Radicals):
এক বা একাধিক একইরকমের পরমাণু অনেকসময় যৌগমূলকের ন্যায় আচরণ করে, তখন এদেরকে মৌলমূলক বলে।
যেমন:
ক্লোরাইড মূলক \(C{l^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইড মূলক \({N^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \3\)
সালফাইড মূলক \({S^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
ফসফাইড মূলক \({P^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(3\)
অক্সাইড মূলক \({O^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
হাইড্রাইড মূলক \({H^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফ্লোরাইড মূলক \({F^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ব্রোমাইড মূলক \(B{r^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)

যৌগমূলক (Radicals):
একাধিক রকমের বিভিন্ন পরমাণু পরষ্পরের সঙ্গে বিশেষ ধরণের জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে যদি সামগ্রিকভাবে একটি অখন্ড পরমাণুর মতো আচরণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তখন ওইরকম পরমাণুর জোটকে যৌগমূলক বলে। এই মূলক ধনাত্বক, ঋনাত্বক বা প্রশম প্রকৃতিরও হতে পারে।

ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ যৌগমূলক:
অ্যামোনিয়াম মূলক \(NH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফসফোনিয়াম মূলক \(PH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)

ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ মূলক:
সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইসালফেট মূলক \(HSO_4^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইকার্বনেট মূলক \(HCO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইট মূলক \(NO_2^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
সায়ানাইড মূলক \(C{N^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)

প্রশম মূলক:
মিথাইল মূলক \(\left( { - C{H_3}} \right)\)
ইথাইল মূলক \(\left( { - {C_2}{H_5}} \right)\)
প্রোপাইল মূলক \(\left( { - {C_3}{H_7}} \right)\)

আণবিক সংকেত লেখার পদ্ধতি (How to write Molecular Formula):
মৌল ও মূলকের চিহ্ন ও যোজ্যতা জানা থাকলে যৌগের সংকেত খুব সহজে প্রকাশ করা যায়। যেমন, একটি মৌল \(M\), এর সঙ্গে অন্য একটি মৌল বা মূলক \(N\) যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করছে। এখন \(M\) মৌলের যোজ্যতা \(x\) এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা \(y\)। তাহলে \(M\) ও \(N\) দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে \({M_y}{N_x}\)। অর্থাৎ \(M\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(N\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লেখা হয় এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(M\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লিখে যৌগটির সংকেতটিকে প্রকাশ করা হয়।

যৌগের সংকেত লেখার নিয়ম:
(1) যৌগটি, দুটি অধাতু নিয়ে গঠিত হলে, যেটি বেশী তড়িৎধনাত্বক, সেটিকে আগে লিখতে হয়। যেমন, \(NO\), \(S{O_2}\), \(PC{l_5}\) ইত্যাদি।
(2) দুটি অধাতুর মধ্যে একটি কঠিন হলে, সেটিকে প্রথমে লিখতে হয়। যেমন: \(C{O_2}\), \(Si{O_2}\) ইত্যাদি।
(3) যৌগটি ধাতু ও অধাতুর দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধাতুটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(CaO\), \(N{a_2}S\) ইত্যাদি।
(4) কোনও যৌগ ধনাত্বক মূলক ও অধাতু দিয়ে গঠিত হলে, প্রথমে ধানাত্বক মূলকটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}Cl\)
(5) কোনো যৌগ ধনাত্বক মূলক ও ঋনাত্বক মূলক দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধনাত্বক মূলকটিকে ও পরে ঋনাত্বক মূলকটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}OH\)
(6) হাইড্রোজেন অধাতু হলেও এটি ধাতুর ন্যায় আচরণ করে তাই, কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার নিয়মের ব্যাতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: \({H_2}S\)

কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:


যোজ্যতা: 1 যোজ্যতা: 2 যোজ্যতা: 3 যোজ্যতা: 4
হাইড্রোজেন \(H\) অক্সিজেন \(O\) বোরন \(B\) কার্বন \(C\)
লিথিয়াম \(Li\) ম্যাগনেশিয়াম \(Mg\) অ্যালুমিনিয়াম \(Al\) সিলিকন \(Si\)
ফ্লোরিন \(F\) ক্যালশিয়াম \(Ca\) - -
সোডিয়াম \(Na\) - - -
ক্লোরিন \(Cl\) - - -
পটাশিয়াম \(K\) - - -
সিলভার/রূপা \(Ag\) - - -


পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:

যোজ্যতা: \(1\) যোজ্যতা: \(2\) যোজ্যতা: \(3\) যোজ্যতা: \(4\) যোজ্যতা: \(5\)
নাইট্রোজেন \(N\) নাইট্রোজেন \(N\) নাইট্রোজেন \(N\) নাইট্রোজেন \(N\) নাইট্রোজেন \(N\)
- সালফার \(S\) - সালফার \(4\) -
- - ফসফরাস \(P\) - ফসফরাস \(P\)
- - আর্সেনিক \(As\) - আর্সেনিক \(As\)
- আয়রন/লোহা \(Fe\) আয়রন/লোহা \(Fe\) - -
- ক্রোমিয়াম \(Cr\) ক্রোমিয়াম \(Cr\) - -
- স্ট্যানাম/টিন \(Sn\) - স্ট্যানাম/টিন \(Sn\) -
- লেড/সীসা \(Pb\) - লেড/সীসা \(Pb\) -
মার্কারী/পারদ \(Hg\) মার্কারী/পারদ \(Hg\) - - -
কপার/তামা \(Cu\) কপার/তামা \(Cu\) - - -


কয়েকটি মৌল মূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:

পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:

যোজ্যতা: \(1\) যোজ্যতা: \(2\) যোজ্যতা: \(3\)
হাইড্রাইড \(H\) অক্সাইড \(O\) ফসফাইড \(P\)
ক্লোরাইড \(Cl\) সালফাইড \(S\) নাইট্রাইড \(N\)
ব্রোমাইড \(Br\) - -
আয়োডাইড \(I\) - -
ফ্লোরাইড \(F\) - -


কয়েকটি যৌগমূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:

যোজ্যতা: \(1\) যোজ্যতা: \(2\) যোজ্যতা: \(3\) যোজ্যতা: \(4\)
হাইড্রক্সিল (\(OH\)) জিঙ্কেট (\(Zn{O_2}\)) ফসফেট (\(P{O_4}\)) -
নাইট্রেট (\(N{O_3}\)) - ফেরোসায়ানাইড (\(Fe{\left( {CN} \right)_6}\)) ফেরিসায়ানাইড (\(Fe{\left( {CN} \right)_6}\))
নাইট্রাইট (\(N{O_2}\)) - - -
বাইকার্বনেট (\(HC{O_3}\)) কার্বনেট (\(C{O_3}\)) - -
বাইসালফেট (\(HS{O_4}\)) সালফেট (\(S{O_4}\)) - -
- সালফাইট (\(S{O_3}\)) - -
পারম্যাঙ্গানেট (\(Mn{O_4}\)) সিলিকেট (\(Si{O_3}\)) - -
ক্লোরেট (\(Cl{O_3}\)) ক্রোমেট (\(Cr{O_4}\)) - -
অ্যালুমিনেট (\(A{l_2}{O_3}\)) ডাইক্রোমেট (\(C{r_2}{O_7}\)) - -
অ্যামোনিয়াম (\(N{H_4}\)) - - -
সায়ানাইড (\(CN\)) - - -


নাইট্রোজেনের পাঁচটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:

যৌগের নাম সংকেত যোজ্যতা
নাইট্রাস অক্সাইড \({N_2}O\) \(1\)
নাইট্রিক অক্সাইড \({N_2}{O_2} = NO\) \(2\)
ডাই নাইট্রোজেন ট্রাই অক্সাইড \({N_2}{O_3}\) \(3\)
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড \({N_2}{O_4} \equiv N{O_2}\) \(4\)
নাইট্রোজেন পেন্টঅক্সাইড \({N_2}{O_5}\) \(5\)


ফসফরাসের দুটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:

যৌগের নাম সংকেত যোজ্যতা
ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড \(PC{l_3}\) \(3\)
ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইড \(PC{l_5}\) \(5\)


সালফারের তিনটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:

যৌগের নাম সংকেত যোজ্যতা
হাইড্রোজেন সালফাইড \({H_2}S\) \(2\)
সালফার ডাইঅক্সাইড \({S_2}{O_4} \equiv S{O_2}\) \(4\)
সালফার ট্রাইঅক্সাইড \({S_2}{O_6} \equiv S{O_3}\) \(6\)


এখন নিম্নের যৌগগুলির সংকেত নিজে নিজে তৈরি করো:

অক্সাইড যৌগ:

সোডিয়াম অক্সাইড/সোডিয়াম মনোক্সাইড
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড
ফেরাস অক্সাইড
ফেরিক অক্সাইড

হাইড্রাইড যৌগ:

সোডিয়াম হাইড্রাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রাইড
লিথিয়াম হাইড্রাইড

হাইড্রক্সাইড যৌগ:

সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড

হ্যালাইড যৌগ:

সোডিয়াম ক্লোরাইড
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড
ফেরাস ক্লোরাইড
ফেরিক ক্লোরাইড
স্ট্যানাস ক্লোরাইড
স্ট্যানিক ক্লোরাইড
মারকিউরাস ক্লোরাইড
মারকিউরিক ক্লোরাইড
সিলভার ক্লোরাইড
সিলভার ব্রোমাইড
পটাশিয়াম আয়োডাইড

নাইট্রেট/নাইট্রাইট/নাইট্রাইড যৌগ:

সোডিয়াম নাইট্রেট
পটাশিয়াম নাইট্রেট
ক্যালশিয়াম নাইট্রেট
সোডিয়াম নাইট্রাইট
পটাশিয়াম নাইট্রাইট
অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড
ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রাইড
কার্বনেট/বাইকার্বনেট যৌগ:

সোডিয়াম কার্বনেট
সোডিয়াম বাইকার্বনেট
পটাশিয়াম কার্বনেট
পটাশিয়াম বাইকার্বনেট
ক্যালশিয়াম কার্বনেট
ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট
অ্যামোনিয়াম কার্বনেট

সালফেট/সালফাইট/সালফাইড যৌগ:

সোডিয়াম সালফেট
পটাশিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইট
পটাশিয়াম সালফাইট
লেড সালফাইড
কিউপ্রাস সালফেট
কিউপ্রিক সালফেট
ফেরাস সালফেট
ফেরিক সালফেট
অ্যামোনিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইড
জিঙ্ক সালফাইড
ম্যাগনেশিয়াম সালফাইড
ক্যালশিয়াম সালফাইড

ফসফেট যৌগ:
ফেরিক ফসফেট
ক্যালশিয়াম ফসফেট
সোডিয়াম ফসফেট
অ্যামোনিয়াম ফসফেট

অ্যালুমিনেট/জিঙ্কেট/সিলিকেট যৌগ:

সোডিয়াম অ্যালুমিনেট
পটাশিয়াম অ্যালুমিনেট
সোডিয়াম জিঙ্কেট
সোডিয়াম সিলিকেট
অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট

ক্রোমেট/ডাইক্রোমেট/ক্লোরেট/পারম্যাঙ্গানেট যৌগ:

পটাশিয়াম ক্লোরেট
পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট
পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট

সায়ানাইড যৌগ:

পটাশিয়াম সায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড

Atom & Molecule Part: 1

Atom & Molecule Part: 2

Atom & Molecule Part: 3

Atom & Molecule Part: 4

Atom & Molecule Part: 5

Atom & Molecule Part: 6

Tuesday, July 10, 2018

Foundation Series, Atom and Molecule, Class: VII, Part: 2

July 10, 2018 0 Comments
ডালটনের পরমাণুবাদে বলা হয়েছিল,
(1) পরমাণু অবিভাজ্য অর্থাৎ পরমাণুকে আর ভাঙা যায় না।
(2) পরমাণু নিরেট অর্থাৎ পরমাণু একদম শক্ত ও এতে কোনও ফাঁকা জায়গা নেই।
(3) পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

কিন্তু বাস্তবে পরমাণু অবিভাজ্য নয়। একটি পরমাণুকে ভেঙে তিনটি মূল কণিকা পাওয়া যায়। (i) ইলেকট্রন (ii) প্রোটন ও (iii) নিউট্রন। এই তিনটি মূল কণিকার প্রকৃতি ও ধর্মও আলাদা। নীচে একটি তালিকার মাধ্যমে এই তিনটি কণিকার অবস্থান, প্রকৃতি, চরিত্র ও ভর দেখানো হল।


ইলেকট্রন এর আধান বা চার্জ ঋনাত্বক এর আধানের পরিমাণ \(1.602 \times {10^{ - 19}}C\) এর ভর \(9.1 \times {10^{ - 31}}kg\)। এই ইলেকট্রন কণিকার ভর সবচেয়ে কম। এটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়।
প্রোটন এর আধান বা চার্জ ধনাত্বক এর আধানের পরিমাণ \(1.602 \times {10^{ - 19}}C\) এর ভর প্রায় \(1.672 \times {10^{ - 27}}kg\) এটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত।
নিউট্রন এর কোনো আধান বা চার্জ নেই। নিস্তড়িৎ কণিকা এটি নিস্তড়িৎ কণিকা এর ভর প্রায় \(1.675 \times {10^{ - 27}}kg\)। এই প্রোটন কণিকার ভর সবচেয়ে বেশী। এটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত।


একটি পরমাণুর মূলত দুটি অংশ। (i) একটি নিউক্লিয়াস (ii) নিউক্লিয়াসের বাইরের ইলেকট্রনমহল।

নিউক্লিয়াস বা পরমাণুর কেন্দ্রক (Neucleus):
একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস হল সবথেকে নিরেট অংশ। এখানে ধনাত্বক আধানের প্রোটন কণা ও নিস্তড়িৎ নিউট্রন কণাগুলি একত্রে ঠাসাঠাসিভাবে অবস্থান করে। এবং এখানে েই সবথেকে ভারী কণা নিউট্রন ও প্রোটন কণাগুলি একত্রে অবস্থান করার ফলে এই নিউক্লিয়াসই হল পরমাণুর সবচেয়ে ভারী ও নিরেট অংশ।

নিউক্লিয়াসের বাইরের ইলেকট্রন মহল:
পরমাণুর এই নিরেট নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঋনাত্বক আধানের ইলেকট্রন কণাগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তন করতে থাকে। ঠিক সৌরজগতের গঠনে সূর্যকে কেন্দ্র করে যেমন বিভিন্ন গ্রহগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তন করে, এখানেও ঠিক সেইরকম এই নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঋনাত্বক আধানের ইলেকট্রন কণাগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তন করে। একটি পরমাণুর সামগ্রিক আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগন্য (কম)। তাই ডালটন বলেছিলেন, পরমাণুর পুরোটাই নিরেট, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পরমাণুর বেশিরভাগ স্থানই ফাঁকা।

তবে সৌরজগতের গঠনে আমরা দেখতে পাই, একটি কক্ষপথে কেবলমাত্র একটি গ্রহই আবর্তন করে কিন্তু এই পরমাণুর গঠনে একটি কক্ষপথে এক বা একাধিক ইলেকট্রন আবর্তন করতে পারে। পরমাণুর গঠনে নিউক্লিয়াসের পর প্রথম যে কক্ষপথটি থাকে তার নাম \(K\) কক্ষপথ, তারপরেরটি \(L\), \(M\), \(N\), ... ... এইভাবে নামকরণ করা হয়। এখানে এই কক্ষপথগুলিকে বলা হয় মুখ্য কোয়ান্টাম নম্বর (\(n\))।
এখানে,
\(n = 1\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(K\) কক্ষপথ।
\(n = 2\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(L\) কক্ষপথ।
\(n = 3\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(M\) কক্ষপথ।
\(n = 4\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(N\) কক্ষপথ।
\(n = 5\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(O\) কক্ষপথ।
\(n = 6\) হলে কক্ষপথটি হল, প্রথম কক্ষপথ এবং এর নাম \(P\) কক্ষপথ।

এবং কোন্‌ কক্ষপথে কতগুলি করে ইলেকট্রন আবর্তন করবে তাও আবার নির্দিষ্ট। এক্ষেত্রে দুটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়।

প্রথম নিয়ম:
\(K\) কক্ষপথে সর্বাধিক থাকতে পারবে \(2\) টি ইলেকট্রন।
\(L\) কক্ষপথে সর্বাধিক থাকতে পারবে \(8\) টি ইলেকট্রন।
\(M\) কক্ষপথে সর্বাধিক থাকতে পারবে \(18\) টি ইলেকট্রন।
\(N\) কক্ষপথে সর্বাধিক থাকতে পারবে \(32\) টি ইলেকট্রন।
\(O\) কক্ষপথে সর্বাধিক থাকতে পারবে \(50\) টি ইলেকট্রন ইত্যাদি।

এখানে খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে যে ওই ওই কক্ষপথে সর্বাধিক ইলেকট্রন সংখ্যা। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশী থাকতে পারে ওই সংখ্যক ইলেকট্রন। কিন্তু তার থেকে কমও থাকতে পারে কিন্তু কোনও ভাবেই ওই নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশী ইলেকট্রন থাকবে না।

দ্বিতীয় নিয়ম:
কোনও পরমাণুর সবথেকে যেটি বাইরের কক্ষপথ হবে, তাতে কখনোই কিন্তু \(8\) টির বেশী ইলেকট্রন থাকবে না। একেবারে শেষ কক্ষপথে একটিমাত্র ক্ষেত্রে \(8\) টি ইলেকট্ন থাকতে পারে। যদি \(8\) টি ইলেকট্রন থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হবে। এই নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্য কোনও পরমাণুর কোনও ভাবেই \(8\) টি বা তার থেকে বেশী ইলেকট্রন থাকবে না। (যদিও একটি ব্যাতিক্রম আছে, হিলিয়াম পরমাণুর বাইরের কক্ষপথে মাত্র \(2\) টি ইলেকট্রন আছে, যদিও হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস)।

➤ তাহলে আমরা এখানে জানলাম যে, কোনও পরমাণু শুধুমাত্র তিনটি কণা দ্বারা গঠিত হয়, ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। এবার পরমাণুগুলি আলাদা আলাদা হওয়ার কারণ হল, ওই পরমানুগুলির ভিতরে প্রোটন সংখ্যার বিভিন্নতা। বিভিন্ন পরমাণুতে তার নিউক্লিয়াসে বিভিন্ন সংখ্যক প্রোটন থাকে বলেই পরমাণুগুলি আলাদা আলাদা হয়। কিন্তু বর্তমানে মোট \(110\) টি মৌলিক পরমাণুর সবগুলোই তৈরি এই ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন কণা দিয়ে।

➤ আর একটি বিষয় মনে রাখা দরকার। আমরা পূর্বেই দেখলাম, পরমাণুর মধ্যে নিউক্লিয়াসের ভিতরে থাকে ধনাত্বক তড়িতের প্রোটন কণা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায় ঋনাত্বক তড়িতের ইলেকট্রন কণিকা। তাহলে পরমাণুর ভিতরে এই তড়িতগ্রস্থ কণাগুলো থাকা সত্ত্বেও কোনও পরমাণু বা পদার্থে চার্জ বা বৈদ্যুতিক শক্‌ লাগে না কেন?
আসলে উপরের তালিকাতে দেখেছি, একটি প্রোটনে ঠিক যে পরিমান ধনাত্বক তড়িৎ থাকে, একটি ইলেকট্রনেও ঠিক সেই পরিমান ঋনাত্বক তড়িত থাকে। এবং কোনো পরমাণুর ভিতরে যতগুলো প্রোটন কণা থাকে, নিউক্লিয়াসের বাইরে ঠিক ততগুলি ইলেকট্রন কণা থাকে। তাই সামগ্রিকভাবে পরমাণুটিকে ভাবলে সেটি আসলে তড়িত নিরপেক্ষ হয়। প্রোটনের ধনাত্বক তড়িত, ইলেকট্রনের ঋনাত্বক তড়িতকে সম্পূর্ণভাবে প্রশমিত করে দেয়, তাই পরমাণু তড়িৎ নিরপেক্ষ বা নিস্তড়িৎ হয়।

পরমাণু বিষয়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা (Two Important Definition):

পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number):
কোনও পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে যতগুলি ধনাত্বক তড়িতের প্রোটন কণা থাকে, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যাকে সর্বদা \(Z\) অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
যেমন:
হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে \(1\) টি প্রোটন থাকে, তাই হাইড্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা হল \(1\)। আবার ম্যাগনেশিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে মোট \(12\) টি প্রোটন থাকে, তাই ম্যাগনেশিয়াম পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা হল \(12\)।

ভরসংখ্যা (Mass Number):
কোনও পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে যতগুলি প্রোটন ও নিউট্রন কণা থাকে, তাদের মোট সমষ্টিকে ভরসংখ্যা বলে। কোনও মৌলের ভরসংখ্যাকে \(Z\) অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
যেমন:
সোডিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে মোট \(11\) টি প্রোটন ও \(12\) টি নিউট্রন থাকে, তাকে সোডিয়াম পরমাণুর ভরসংখ্যা হল \(23\)। আবার ক্যালশিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে মোট \(20\) টি প্রোটন ও \(20\) টি নিউট্রন থাকে, তাই ক্যালশিয়াম পরমাণুর ভরসংখ্যা হল \(40\)।

এখানে প্রথম \(20\) টি পরমাণুর গঠন একটি বিস্তারিতভাবে ও তালিকার মাধ্যমে দেখানো হল। একটি পরমাণুর গঠন বর্ণনা করা বলতে বোঝায় তার কেন্দ্রে কয়টি প্রোটন ও কয়টি নিউট্রন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে কোন কক্ষপথে কয়টি ইলেকট্রন কিভাবে আছে তা বিশেষভাবে জানা।

হাইড্রোজেন পরমাণু (\(H_1^1\)):
হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে একটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে একটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।

পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

হিলিয়াম পরমাণু (\(He_2^4\)):
হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে দুটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে দুটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

লিথিয়াম পরমাণু (\(Li_3^6\)):
লিথিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে তিনটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে তিনটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

বেরিলিয়াম পরমাণু (\(Be_4^9\)):
বেরিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে চারটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে চারটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

বোরন পরমাণু (\(B_5^{10}\)):
বোরন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে মধ্যে পাঁচটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে পাঁচটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।

কার্বন পরমাণু (\(C_6^{12}\)):
কার্বন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে মোট ছয়টি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে ছয়টি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

নাইট্রোেজেন পরমাণু (\(N_7^{14}\)):
নাইট্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে মোট সাতটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে সাতটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

অক্সিজেন পরমাণু (\(O_8^{16}\)):
অক্সিজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে মোট আটটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে আটটি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

ফ্লোরিন পরমাণু (\(F_9^{19}\)):
ফ্লোরিন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে মোট নয়টি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে নয়টি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস

নিয়ন পরমাণু (\(Ne_{10}^{20}\)):
নিয়ন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে মোট দশটি প্রোটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরে দশটি ইলেকট্রন বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তন করে।
পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন বিন্যাস



পারমাণবিক সংখ্যা পরমাণুর নাম চিহ্ন \(K\left( 2 \right)\) \(L\left( 8 \right)\) \(M\left( 18 \right)\) \(N\left( 32 \right)\) যোজ্যতা চরিত্র
\(1\) হাইড্রোজেন \(H\) \(1\) - - - \(1\) অধাতু
\(2\) হিলিয়াম \(He\) \(2\) - - - \(0\) নিষ্ক্রিয় গ্যাস
\(3\) লিথিয়াম \(Li\) \(2\) \(1\) - - \(1\) ধাতু
\(4\) বেরিলিয়াম \(Be\) \(2\) \(2\) - - \(2\) ধাতু
\(5\) বোরন \(B\) \(2\) \(3\) - - \(3\) ধাতু
\(6\) কার্বন \(C\) \(2\) \(4\) - - \(\left( {8 - 4} \right) = 4\) অধাতু
\(7\) নাইট্রোজেন \(N\) \(2\) \(5\) - - \(\left( {8 - 5} \right) = 3\) অধাতু
\(8\) অক্সিজেন \(O\) \(2\) \(6\) - - \(\left( {8 - 6} \right) = 2\) অধাতু
\(9\) ফ্লোরিন \(F\) \(2\) \(7\) - - \(\left( {8 - 7} \right) = 1\) অধাতু
\(10\) নিয়ন \(Ne\) \(2\) \(8\) - - \(\left( {8 - 8} \right) = 0\) নিষ্ক্রিয় গ্যাস
\(11\) সোডিয়াম \(Na\) \(2\) \(8\) \(1\) - \(1\) ধাতু
\(12\) ম্যাগনেশিয়াম \(Mg\) \(2\) \(8\) \(2\) - \(2\) ধাতু
\(13\) অ্যালুমিনিয়াম \(Al\) \(2\) \(8\) \(3\) - \(3\) ধাতু
\(14\) সিলিকন \(Si\) \(2\) \(8\) \(4\) - \(\left( {8 - 4} \right) = 4\) -
\(15\) ফসফরাস \(P\) \(2\) \(8\) \(5\) - \(\left( {8 - 5} \right) = 3\) অধাতু
\(16\) সালফার \(S\) \(2\) \(8\) \(6\) - \(\left( {8 - 6} \right) = 2\) অধাতু
\(17\) ক্লোরিন \(Cl\) \(2\) \(8\) \(7\) - \(\left( {8 - 7} \right) = 1\) অধাতু
\(18\) আর্গন \(Ar\) \(2\) \(8\) \(8\) - \(\left( {8 - 8} \right) = 0\) নিষ্ক্রিয় গ্যাস
\(19\) পটাশিয়াম \(K\) \(2\) \(8\) \(8\) \(1\) \(1\) ধাতু
\(20\) ক্যালশিয়াম \(Ca\) \(2\) \(8\) \(8\) \(2\) \(2\) ধাতু


আয়নের ধারণা (Concept of Ions):
আমরা দেখলাম পরমাণু সাধারণভাবে নিস্তড়িৎ হয়, কারণ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে যতগুলি ধনাত্বক তড়িতের প্রোটন কণা থাকে, ওই পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরে ঠিক ততগুলি ঋনাত্বক তড়িতের ইলেকট্রন কণা থাকে। এবং প্রোটন ও ইলেকট্রনের আধানের পরিমাণ একই হওয়ায় পরমাণু নিস্তড়িত হয়।
এই প্রোটন ও ইলেকট্রনের মধ্যে প্রোটনের অবস্থান পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতরে ও ইলেকট্রনের অবস্থান নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষপথে। তাই একটি পরমাণু থেকে কোনওভাবেই প্রোটন সহজে বেরিয়ে যেতে পারে না বা বাইরে থেকেও প্রোটন এসে নিউক্লিয়াসের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
কিন্তু পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলি বিভিন্ন কারণে (শক্তি শোষন বা বর্জনে) বেরিয়ে যেতে পারে আবার অন্য কোনও পরমাণু থেকে চলেও আসতে পারে। তখন ওই পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা আলাদা হয়ে যায়। এই প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা আলাদা হলে আধানের পার্থক্যের জন্য ওই পরমাণুটি তড়িৎগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন তাকে আর নিস্তড়িৎ পরমাণু বলা হয় না। তখন পরমাণুটি হয় তড়িৎগ্রস্থ। এই তড়িৎগ্রস্থ পরমাণুই হল আয়ন।

একটি নিস্তড়িৎ পরমাণুর প্রবণতা:
আমরা উপরের তালিকাতে দেখেছি, কোনও পরমাণুর বাইরের কক্ষপথটিতে \(8\) টি ইলেকট্রন হয়ে গেলেই, তার যোজ্যতা শূন্য হয়ে যায়। তবে ব্যাতিক্রম হয় কেবলমাত্র হিলিয়াম (\(He\)) পরমাণুর ক্ষেত্রে। হিলিয়াম পরমাণুর বাইরের কক্ষপথে (\(2\)) টি ইলেকট্রনেই নিষ্ক্রিয়তা লাভ করে এবং যোজ্যতা শূন্য হয়ে যায়। এখন এই মৌলগুলিকে নিষ্ক্রিয় মৌল বলা হয়।
নিষ্ক্রিয় মৌল অর্থাৎ যে রাসায়নিক ভাবে নিষ্ক্রিয় চরিত্রের হয়ে যায়। অর্থাৎ তখন এই মৌলগুলি আর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে না। এইরকম কয়েকটি মৌল হল:
হিলিয়াম (He): K(2)
নিয়ন (Ne): K(2), L(8)
আর্গন (Ar): K(2), L(8), M(8)
ক্রিপটন (Kr): K(2), L(8), M(18), N(8)
জেনন (Xe): K(2), L(8), M(18), N(18), O(8)
রেডন (Rn): K(2), L(8), M(18), N(32), O(18), P(8)

এই নিষ্ক্রিয় মৌলগুলি বাদে যতগুলি মৌল আছে, সবগুলিরই সবচেয়ে বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা \(8\) হয় না। এদের বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা হয় \(1,2,3,4,5,6,7\) । পরমাণুগুলির এই সক্রিয়তার মূলকারণ হল এই বাইরের কক্ষে থাকা ইলেকট্রনগুলি। এখন এই পরমাণুগুলি তাদের সর্বঃবহিস্থ এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে, পরমাণুটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করতে চায়।
যে সমস্ত পরমাণুগুলির বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা \(1\), \(2\) বা, \(3\) হয়, তারা সাধারণত ইলেকট্রন বর্জনের মাধ্যমে খুব সহজেই তার বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন কাঠামোতে অষ্টকপূর্তি করে এবং নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করে। এই অবস্থায় পরমাণুটির নিউক্লিয়াসের ভিতরে প্রোটন সংখ্যার তুলনায়, ইলেকট্রন সংখ্যা কম হয়। তখন এই পরমাণু ধনাত্বক তড়িতগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু রাসায়নিক ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়।
আবার যে সমস্ত পরমাণুগুলির বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা \(5\), \(6\) বা, \(7\) হয়, তারা সাধারণত বাইরে থেকে ইলেকট্রন গ্রহনের মাধ্যমে খুব সহজেই তার বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন কাঠামোতে অষ্টকপূর্তি করে এবং নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করে।

যেমন:

\(Na\left( {2,8,1} \right)\) \( - 1e\) \(N{a^{ + 1}}\left( {2,8} \right)\) নিয়নের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হল।
\(Mg\left( {2,8,2} \right)\) \( - 2e\) \(M{g^{ + 2}}\left( {2,8} \right)\) নিয়নের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হল।
\(Al\left( {2,8,3} \right)\) \( - 3e\) \(A{l^{ + 3}}\left( {2,8} \right)\) নিয়নের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হল।
\(P\left( {2,8,5} \right)\) \( + 3e\) \({P^{ - 3}}\left( {2,8,8} \right)\) আর্গনের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে অ্যানায়নে পরিণত হল।
\(S\left( {2,8,6} \right)\) \( + 2e\) \({S^{ - 2}}\left( {2,8,8} \right)\) আর্গনের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে অ্যানায়নে পরিণত হল।
\(Cl\left( {2,8,7} \right)\) \( + 1e\) \(C{l^{ - 1}}\left( {2,8,8} \right)\) আর্গনের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করলো এবং নিষ্ক্রিয় চরিত্র অর্জন করে অ্যানায়নে পরিণত হল।


এখানে দেখা গেল, যে সমস্ত পরমাণুগুলির বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা \(1\), \(2\) বা \(3\) হয়, তারা সবসময় বাইরের কক্ষ থেকে ইলেকট্রনকে ত্যাগ করে এবং ইলেকট্রন ত্যাগ করলেই তা সর্বদা ধনাত্বক আয়নে পরিণত হয়। এদের ক্যাটায়ন বলে। এবং এরা সবসময় ধাতু হয়। এই ধাতুরাই সর্বদা ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়নে পরিণত হয়।

আবার যে সমস্ত পরমাণুগুলির বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা \(5\), \(6\) বা \(7\) হয়, তারা সবসময় বাইরের কক্ষে, বাইরে থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং ইলেকট্রন গ্রহণ করলেই তা সর্বদা ঋনাত্বক আয়নে পরিণত হয়। এদের অ্যানায়ন বলে। এবং এরা সবসময় অধাতু হয়। এই অধাতুরাই সর্বদা ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়।

আয়ন (Ions):
ধনাত্বক বা ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ পরমাণুকে আয়ন বলে।
যেমন: \(N{a^ + }\), \(C{a^{ + + }}\), \(C{l^ - }\), \({S^ = }\) ইত্যাদি।

ক্যাটায়ন (Cation):
কোনও পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথ থেকে ইলেকট্রন বর্জনের ফলে সৃষ্ট ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু বা আয়নকে ক্যাটায়ন বলে।
যেমন: \(N{a^ + }\), \(C{a^{ + + }}\) ইত্যাদি

অ্যানায়ন (Anion):
কোনও পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে ইলেকট্রন গ্রহণের ফলে সৃষ্ট ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু বা আয়নকে অ্যানায়ন বলে।
যেমন: \(C{l^ - }\), \({S^ = }\) ইত্যাদি।

নিম্নে কয়েকটি আয়ন তৈরির কৌশলের উদাহরন দেওয়া হল:
(1) \(H - 1e \to {H^ + }\)
(2) \(H + 1e \to {H^ - }\)
(3) \(Li - 1e \to L{i^ + }\)
(4) \(Be - 2e \to B{e^{ + + }}\)
(5) \(B - 3e \to {B^{ + + + }}\)
(6) \(N + 3e \to {N^{ - - - }}\)
(7) \(O + 2e \to {O^{ - - }}\)
(8) \(F + 1e \to {F^ - }\)
(9) \(Na - 1e \to N{a^ + }\)
(10) \(Mg - 2e \to M{g^{ + + }}\)
(11) \(Al - 3e \to A{l^{ + + + }}\)
(12) \(P + 3e \to {P^{ - - - }}\)
(13) \(S + 2e \to {S^{ - - }}\)
(14) \(Cl + 1e \to C{l^ - }\)
(15) \(K - 1e \to {K^ + }\)
(16) \(Ca - 2e \to C{a^{ + + }}\)

Atom & Molecule Part: 1

Atom & Molecule Part: 2

Atom & Molecule Part: 3

Atom & Molecule Part: 4

Atom & Molecule Part: 5

Atom & Molecule Part: 6

Saturday, July 07, 2018

Foundation Series, Atom And Molecule, Class: VII, Part: 1

July 07, 2018 0 Comments
বিজ্ঞানের অগ্রগতির একদম প্রথম দিকে পরমাণু বা অণুর সম্পর্কে কোনো ধারণাই তখনকার বিজ্ঞানীদের ছিল না। যেকোনও মৌলের (পদার্থের) শেষ উৎস জানতে পরমাণুর ধারণার প্রথম কল্পনা করা হয় প্রায় খ্রীষ্টজন্মের কয়েক শতাব্দী পূর্বে প্রায় \(\left( {500BC} \right)\) তে। এই বিষয়ে ভারতীয় দার্শনিক মহর্ষি কণাদকে পরমাণুরর ধারণার প্রথম পথিকৃৎ হিসাবে মনে করা হয়। তাঁর মতে পরমাণু হল অস্থিত্ব আছে এমন কিছু যা চিরন্তন, অক্ষয় এবং অখন্ডনীয় এবং যার কোনও উৎস বা কারণ নেই। এই বিরাট বিশ্বসংস্থিতির মধ্যে কণামাত্র স্থানে এর অবস্থান এবং অতি সূক্ষ যা চোখে দেখা যায় না অথচ সমস্ত কিছুর সৃষ্টির মূলে রয়েছে এই পরমাণু।

ঋষি কণাদের এই ধারণাতে অবাক হয়েছিলেন ডেমোক্রিটাস (Democritus), লিউপ্পাস (Leuappus) ইত্যাদি গ্রীক দার্শনিকগণ। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁরা স্বীকার করে নেন। তাঁরা এই কণাগুলির প্রথম নামকরণ করেছিলেন 'atomos' যার গ্রীক ভাষার যার অর্থ হল 'not divisible'। এরপর বেশ কয়েক শতাব্দী কেটে যায়। কিন্তু পরমাণু সম্পর্কে কেউ কোনো ধারণা দিতে পারে নি। আর এই পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোনও কণার অস্থিত্বও জানা যায় নি।

এর পরে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডালটন কয়েকদশক ধরে বিভিন্ন রাসায়নিক সংযোগ সংক্রান্ত বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে তিনি আভাস পেয়েছিলেন যে, পরমাণুর অস্থিত্ব আছে এবং তারা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যুক্ত ও বিযুক্ত হয়। অবশেষে 1808 খ্রীষ্টাব্দে পরমাণুর বৈশিষ্ট্যগত একটি বাস্তবসম্মত তত্ত্বের উপস্থাপনা করেন, যা ডালটনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত। ডালটনের এই পরমাণুবাদই প্রথম পরমাণুর ধারণাকে দার্শনিক তত্ত্ব থেকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় নিয়ে আসে।

ডালটনের পরমাণুবাদ (Dulton's Atomic Theory):
(1) প্রতিটি পদার্থ অসংখ্য অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণা দ্বারা গঠিত। এই কণাগুলির নাম হল পরমাণু বা অ্যাটম।
(2) একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলির আকার, আকৃতি, ভর ও অন্যান্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে একইরকম হয়।
(3) বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলির আকার, আকৃতি, ভর ও অন্যান্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে বিভিন্ন রকমের হয়।
(4) রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা পরমাণুকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।
(5) রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় পরমাণুগুলি অখন্ড কণারূপে সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগিক অণু গঠন করে।

পরমাণু (Atom):
মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে। পরমাণুতে মৌলিক পদার্থের সব ধর্ম বজায় থাকে এবং পরমাণুর স্বাধীন অস্থিত্ব থাকতে পারে আবার নাও পারে।

তবে বর্তমানে পরমাণু আর অবিভাজ্য নয়। আবিস্কৃত হয়েছে যেকোনও পরমাণু আবার (i) ইলেকট্রন (ii) প্রোটন ও (iii) নিউট্রন নামে তিনটি কণা দিয়ে গঠিত। আর পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহনও করে না। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পরমাণুর মধ্যে থাকা ইলেকট্রন কণাগুলি।

পরমাণুকে প্রকাশ করার নিয়ম:
প্রাচীনকালের বিজ্ঞানীরা সেইসময় যতগুলো পরমাণুর সন্ধান পেয়েছিলেন, সেগুলোকে কতকগুলি জটিল চিত্র বা ছবির মাধ্যমে প্রথমে প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া 92 টি মৌলকে এই নিয়মে প্রকাশ করা, লেখা বা মনে রাখাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখন বিজ্ঞানী বার্জিলিয়াস এই মৌলগুলির পরমাণুগুলিকে সহজ প্রণালীতে প্রকাশ করার চিন্তাধারা দেন যা আজও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, তা হল পরমাণুগুলির চিহ্ন (Symbol)।

চিহ্ন (Symbol):
মৌলিক পদার্ধের নাম, যার দ্বারা সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়, তাকে চিহ্ন বলে। অর্থাৎ মৌলিক পদার্থের পরমাণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকেই চিহ্ন বলে।

চিহ্ন লেখার পদ্ধতি (Process To Write Symbol):
(1) সাধারণত মৌলিক পদার্থের ইংরাজী নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে পরমাণুগুলিকে প্রকাশ করা হয়। যেমন:

পরমাণুর নাম পরমাণুর চিহ্ন
বোরন (Boron) \(B\)
কার্বন (Carbon) \(C\)
নাইট্রোজেন (Nitrogen) \(N\)
হাইড্রোজেন (Hydrogen) \(H\)
অক্সিজেন (Oxygen) \(O\)
সালফার (Sulphur) \(S\)
ফসফরাস (Phosphorus) \(P\)
ফ্লোরিন (Fluorin) \(F\)


(2) একই প্রথম অক্ষরবিশিষ্ট একাধিক মৌল থাকলে, তখন ওই প্রথম অক্ষরটির সঙ্গে পরের অক্ষরটি বা প্রথম অক্ষরের সঙ্গে জোরে উচ্চারিত অক্ষরটি যোগ করে, মৌলটির চিহ্ন প্রকাশ করা হয়। যেমন:
ক্যালশিয়াম (Calcium) \(Ca\)
ব্রোমিন (Bromine) \(Br\)
বিসমাথ (Bismuth) \(Bi\)
বেরিয়াম (Barium) \(Ba\)
বেরিলিয়াম (Berilium) \(Be\)
বার্কেলিয়াম (Barkelium) \(Bk\)
ক্যাডমিয়াম (Cadmium) \(Cd\)
সিজিয়াম (Cesium) \(Cs\)
ক্লোরিন (Chlorine) \(Cl\)
ক্রোমিয়াম (Chromium) \(Cr\)


(3) কিছু মৌলের পরমাণুর নাম ল্যাটিন ভাষা অনুসারে প্রথম অক্ষরটি বা পরপর দুটি অক্ষর বা প্রথম অক্ষরের সাথে জোরে উচ্চারিত অক্ষরদুটি মিলিয়ে মৌলটির চিহ্ণ প্রকাশ করা হয়। যেমন:
সোডিয়াম (Natrium) \(Na\)
পটাশিয়াম (Kalium) \(K\)
আয়রন/লোহা (Ferrum) \(Fe\)
লেড/সীসা (Plumbum) \(Pb\)
স্ট্যানাম/টিন (Stannum) \(Sn\)
সিলভার/রূপা (Argentum) \(Ag\)
গোল্ড/সোনা (Aurum) \(Au\)
কপার/তামা (Cuprum) \(Cu\)
মার্কারী/পারদ (Hydragyrum) \(Hg\)

(4) চিহ্ণ লিখতে গেলে সবসময় বড় হাতের অক্ষরে (Capital) লিখতে হয়। আর চিহ্নটি যদি দুটি অক্ষরের হয় তাহলে প্রথমটি বড় হাতের (Capital) ও পরের অক্ষরটি ছোটো হাতের (Small) লিখতে হয়। যেমন
কার্বন \(c\) ভূল লেখা \(C\) সঠিক লেখা
নাইট্রোজেন \(n\) ভূল লেখা \(N\) সঠিক লেখা
সোডিয়াম \(So\) ভূল লেখা \(Na\) সঠিক লেখা
সোডিয়াম \(NA\) ভূল লেখা \(Na\) সঠিক লেখা
সোডিয়াম \(na\) ভূল লেখা \(Na\) সঠিক লেখা
ক্লোরিন \(CL\) ভূল লেখা \(Cl\) সঠিক লেখা

পূর্বেই বলা হয়েছে মৌলিক পদার্থের পরমাণুর স্বাধীন অস্থিত্ব থাকতে পারে আবার নাও পারে। যেমন, আয়রণ (\(Fe\)), পটাশিয়াম (\(K\)), ক্যালশিয়াম (\(Ca\)), ম্যাগনেশিয়াম (\(Mg\)) ইত্যাদি কিছু কিছু মৌলের পরমাণু আছে যাদের স্বাধীন অস্থিত্ব আছে। কিন্তু হাইড্রোজেন (\(H\)), অক্সিজেন (\(O\)), নাইট্রোজেন (\(N\)) এইরকম অসংখ্য মৌল আছে যাদের পরমাণুর কোনো স্বাধীন সত্ত্বা বা স্বাধীন অস্থিত্ব নেই। এদের ক্ষেত্রে কি হয়?
এরা সবসময় দুই বা ততোধিক একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে অবস্থান করে। যেমন,
হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে। তেমনি
অক্সিজেনেরও দুটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে, তেমনি
নাইট্রোজেন, ক্লোরিন, ফ্লোরিন সবাই দুটি করে পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
সবক্ষেত্রে আবার দুটি নয়, যেমন অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, ফসফরাসের চারটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে আবার সালফারের আটটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে।
আবার সবসময় যে একই মৌলের পরমাণুই একসাথে জোড় বেঁধে স্বাধীনভাবে অবস্থান করবে তা নয়। যেমন, হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি পরমাণু মিলে জলের একটি যৌগিক পরমাণু গঠন করে স্বাধীনভাবে থাকে।
কার্বনের একটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের দুটি পরমাণু মিলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের একটু যৌগিক পরমাণু গঠন করে স্বাধীনভাবে থাকে।
তখন এদেরকে আর পরমাণু বা যৌগিক পরমাণু বা পরমাণুর সমষ্টি বলা হয় না। তখন এদের বলা হয় অণু। অর্থাৎ অণুর সবসময় স্বাধীন সত্ত্বা বা স্বাধীন অস্থিত্ব থাকবেই।
এই অণু সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী অ্যামোদিও অ্যাভোগাড্রো।
তাই এখানে পরমাণুর ধারণার পথিকৃৎ জন ডালটন হলেও অণুর ধারণা কিন্তু সর্বপ্রথম দেন বিজ্ঞানী অ্যামোদিও অ্যাভোগাড্রো। তাই অণুর সংজ্ঞায় বলা যায় -

অণু (Molecule):
মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম যে কণা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে এবং যার মধ্যে পদার্থটির সমস্ত ধর্ম বজায় থাকে, তাকে অণু বলে।
যেমন.
একটি অক্সিজেন অণু, দুটি অক্সিজেন পরমাণু (\(O\))নিয়ে গঠিত। তাই অক্সিজেন অণুকে লেখা হয় \({O_2}\) দ্বারা।
একটি হাইড্রোজেন অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (\(H\)) দ্বারা গঠিত। তাই হাইড্রোজেন অণুকে লেখা হয় \({H_2}\) দ্বারা।
একটি জলের অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (\(H\)) এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু (\(O\)) দ্বারা গঠিত। তাই জলের অণুকে লেখা হয় \({H_2}O\) দ্বারা।
একটি ওজোনের অণু, তিনটি অক্সিজেন পরমাণু (\(O\)) পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই একটি ওজোন অণুকে লেখা হয় \({O_3}\) দ্বারা।
একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু, দুটি কার্বন পরমাণু (\(C\)) এবং দুটি অক্সিজেন পরমাণু (\(O\)) পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুকে লেখা হয় \(C{O_2}\) দ্বারা।

মৌলিক অণু:
কোনও অণু, একই প্রকার পরমাণু নিয়ে গঠিত হলে, তাদের মৌলিক অণু বলে।
যেমন,
(i) একটি হাইড্রোজেন অণু, দুটিই হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) দ্বারা গঠিত। তাই একটি হাইড্রোজেন অণুকে লেখা হয় \({H_2}\)।
(ii) একটি অক্সিজেন অণু , দুটিই অক্সিজেন পরমাণু \(\left( O \right)\) দ্বারা গঠিত। তাই একটি অক্সিজেন অণুকে লেখা হয় \({O_2}\)।
(iii) একটি ক্লোরিন অণু, দুটিই ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) দ্বারা গঠিত। তাই একটি ক্লোরিন অণুকে লেখা হয় \(C{l_2}\)।
(iv) একটি ওজোন অণু, তিনটিই অক্সিজেন পরমাণু \(\left( O \right)\) পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই একটি ওজোন অণুকে লেখা হয় \({O_3}\)।
এই অণুগুলি একই ধরণের পরমাণু দিয়ে গঠিত হওয়ায় এরা সবাই মৌলিক অণু। কয়েকটি মৌলিক অণুর নাম নীচে দেওয়া হল।
\({H_2}\), \({O_2}\), \({N_2}\), \(C{l_2}\), \({O_3}\), \(B{r_2}\), \({F_2}\), \({P_4}\), \({S_8}\), \(Na\), \(K\), \(Mg\), \(He\), \(Ne\) এগুলি সবই মৌলিক অণু।

যৌগিক অণু:
কোনও অণু, বিভিন্ন রকমের পরমাণু দ্বারা গঠিত হলে, তাকে যৌগিক অণু বলে।
যেমন,
(i) একটি জলের অণু দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) এবং একটি \(\left( O \right)\) পরমাণু নিয়ে গঠিত। তাই জলের অণুকে লেখা হয় \({H_2}O\)।
(ii) একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু, কার্বনের একটি পরমাণু \(\left( C \right)\) এবং অক্সিজেনের দুটি পরমাণু \(\left( O \right)\) নিয়ে গঠিত। তাই কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুকে লেখা হয় \(C{O_2}\)।
(iii) একটি অ্যামোনিয়ার অণু, একটি নাইট্রোজেনের পরমাণু \(\left( N \right)\) এবং তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) দ্বারা গঠিত। তাই অ্যামোনিয়ার অনুকে লেখা হয় \(N{H_3}\) দ্বারা।
(iv) একটি সালফিউরিক অ্যাসিডের অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (\(H\)), একটি সালফার পরমাণু (\(S\)) এবং চারটি অক্সিজেন পরমাণু (\(O\)) নিয়ে গঠিত। তাই একটি সালফিউরিক অ্যাসিডের অণুকে লেখা হয় \({H_2}S{O_4}\)।

এই অণুগুলি বিভিন্ন রকমের পরমাণু দিয়ে গঠিত হওয়ায় এরা সবাই যৌগিক অণু। কয়েকটি যৌগিক অণুর নাম নীচে দেওয়া হল:
(1) জলের অণু (\({H_2}O\)), (2) কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু (\(C{O_2}\)), (3) অ্যামোনিয়ার অণু (\(N{H_3}\)), (4) হাইড্রোজেন সালফাইডের অণু (\({H_2}S\)), (5) সালফিউরিক অ্যাসিডের অণু (\({H_2}S{O_4}\)), (6) নাইট্রিক অ্যাসিডের অণু (\(HN{O_3}\)), (7) হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের অণু (\(HCl\)), (8) সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের অণু (\(NaOH\)), (9) ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইডের অণু (\(PC{l_3}\)), (10) ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইডের অণু (\(PC{l_5}\)) ইত্যাদি - এরা সবাই যৌগিক অণু।

পারমাণবিকতা (Atomicity):
কোনও মৌলের একটি অণু (মৌলিক অণু), যতগুলি পরমাণু নিয়ে গঠিত হয়, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমাণবিকতা বলে। যেমন:
পারমাণবিকতা (Atomicity) উদাহরণ (Example)
\(1\) \(Na\), \(K\), \(Ca\) ইত্যাদি ধাতু, এবং \(He\), \(Ne\), \(Ar\) ইত্যাদি মৌলের অণু কেবলমাত্র একটি পরমাণু দিয়েই গঠিত, তাই এদের পারমাণবিকতা হয় \(1\)। এদের অণু ও পরমাণু সমার্থক।
\(2\) \({H_2}\), \({O_2}\), \({N_2}\), \({Cl_2}\), \({Br_2}\) ইত্যাদি মৌলের অণু, দুটি করে পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাই এদের পারমাণবিকতা \(2\)।
\(3\) ওজোন অণু \({O_3}\) তিনটি অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাই এর পারমাণবিকতা হল \(3\)।
\(4\) একটি ফসফরাস অণু \({P_4}\) অণু চারটি ফসফরাসের পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই ফসফরাসের পারমাণবিকতা হল \(4\)।
\(8\) একটি সালফারের অণু \({S_8}\) আটটি সালফারের পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাই সালফারের পারমানবিকতা হল \(8\)।


অণুকে লেখার পদ্ধতি বা অণুকে প্রকাশ করার নিয়ম:
কোনো মৌলিক পদার্থের পরমাণুকে প্রকাশ করার জন্য যেমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, তেমনি কোনও মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুকেও সংক্ষেপে প্রকাশ করতে গেলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমরা পূর্বেই দেখেছি এখানে মৌলিক অণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার নিয়ম খুব সহজ। ওই মৌলিক অণুটি, ঠিক কতগুলি পরমাণু দ্বারা গঠিত তা পরমাণুটির চিহ্ন প্রথমে লিখে তারপর Subscript হিসাবে ওই পরমাণুর সংখ্যাটিকে লিখতে হয়। অর্থাৎ ওই পরমাণুর চিহ্নটির ডানদিকে একটু নীচে করে পরমাণুর সংখ্যাটিকে সবাতে হয়। যেমন: \({H_2}\), \({O_2}\), \(C{l_2}\), \({O_3}\), \({P_4}\) ইত্যাদি। তখন এদেরকে মৌলিক পদার্থের সংকেত (Formula) বা মৌলিক অণুগুলির সংকেত (Formula) বলে। তখন আর এদের চিহ্ন (Symbol) বলে না।

কিন্তু যৌগিক পদার্থের অণুগুলির সংকেত (Formula) লেখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিল নিয়ম মানতে হয়। আমরা প্রথমে একটি পরমাণুর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়ার পর যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লেখার নিয়ম শিখবো।



Atom & Molecule Part: 1

Atom & Molecule Part: 2

Atom & Molecule Part: 3

Atom & Molecule Part: 4

Atom & Molecule Part: 5

Atom & Molecule Part: 6